
খাবার খাওয়ার সময় বা পরে পানি পান করা নিয়ে আমাদের অনেকের মধ্যেই রয়েছে বিভ্রান্তি। কেউ বলেন, খাওয়ার সময় পানি পান করা উচিত নয়। আবার কেউ বলেন, খাওয়ার পরেই পানি পান করলে হজম ভালো হয়। আসলে কোনটি সঠিক?
পানি আমাদের জীবনের অপরিহার্য উপাদান। দেহের প্রায় ৭০ শতাংশই পানি, যা খাবার হজম, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্সসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে ভূমিকা রাখে। কিন্তু পানি পান করার সঠিক সময় না জানলে উপকারের বদলে ক্ষতিও হতে পারে।
বিভিন্ন পুষ্টিবিদের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে অন্তত দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করা উচিত। তবে সেটি সারাদিনে অল্প অল্প করে পান করতে হবে, খাবার সময় একসঙ্গে অনেকটা নয়। খাবার খাওয়ার সময় অনেকেই গ্লাসভর্তি পানি পান করে ফেলেন, যা হজমক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। খাবার হজমে প্রয়োজনীয় এনজাইম ও হরমোন পানির সঙ্গে মিশে দুর্বল হয়ে যায়, ফলে খাবার ঠিকভাবে হজম হয় না এবং শরীর পর্যাপ্ত পুষ্টি শোষণ করতে পারে না।
খাওয়ার পরপরই বেশি পানি পান করার অভ্যাসও ক্ষতিকর। এতে ভিটামিন এ, ডি, ই ও কে–এর মতো চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন শরীর থেকে বের হয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি পাকস্থলীর গ্যাস্ট্রিক রস ও এনজাইমের কার্যকারিতা কমে যায়, ফলে হজমে সমস্যা হয় ও অস্বস্তি দেখা দেয়।
তাহলে কখন পানি পান করা উচিত?
বিশেষজ্ঞদের মতে, খাবার শেষে অন্তত ২৫–৩০ মিনিট পর পানি পান করা সবচেয়ে ভালো। এতে হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে সম্পন্ন হয়।
যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে, তারা সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস পানি পান করবেন, আর খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে ও ৩০ মিনিট পর পানি পান করলে উপকার পাবেন।
অন্যদিকে যারা ওজন কমাতে চান, তারা খাবারের কিছুক্ষণ আগে এক গ্লাস পানি পান করতে পারেন। এতে ক্ষুধা কিছুটা কমে যায় এবং খাবারের পরিমাণও স্বাভাবিকভাবে কমে আসে। খাবারের পর সামান্য হাঁটাহাঁটি করে আধা ঘণ্টা পর পানি পান করলে হজম আরও ভালো হয়।
পানি আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য। তবে সঠিক সময় ও পরিমাণে পান করলেই তাতে মিলবে সত্যিকারের উপকার।
মন্তব্য করুন