
প্রযুক্তির এ যুগে স্মার্টফোন, কম্পিউটার বা ইন্টারনেট ছাড়া দিন পার করা কঠিনই বটে। করোনাকালের পর ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীলতা অনেক বেড়েছে। তাই আমাদের দৈনিক ইন্টারনেট ব্যবহারের একটি বড় অংশ জুড়েই রয়েছে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। আর অনলাইনে নিরাপদ থাকা এখন সবার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ— কারণ সাইবার অপরাধীরা নানা কৌশলে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করার চেষ্টা করে।
আসুন অনলাইনে নিরাপদ থাকার কিছু কার্যকর উপায় জেনে নেই
১। শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন: অক্ষর (A–Z, a–z), সংখ্যা (0–9) ও বিশেষ চিহ্ন (!, @, # ইত্যাদি) মিশিয়ে পাসওয়ার্ড তৈরি করুন। একই পাসওয়ার্ড কখনও একাধিক অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করবেন না।
২️। দুই স্তরের নিরাপত্তা চালু করুন: এটি লগইনের সময় অতিরিক্ত কোড চায়, ফলে কেউ আপনার পাসওয়ার্ড জানলেও প্রবেশ করতে পারবে না।
৩️। সন্দেহজনক লিঙ্কে ক্লিক করবেন না: অপরিচিত মেইল, মেসেজ বা ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম লিঙ্কে ক্লিক করবেন না। এগুলোর মাধ্যমে ভাইরাস বা ফিশিং হতে পারে।
৪️। পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহারে সতর্ক থাকুন: ব্যাংকিং, অনলাইন শপিং বা পাসওয়ার্ড সংক্রান্ত কাজ পাবলিক ওয়াইফাইয়ে করবেন না।
৫️।নিয়মিত সফটওয়্যার ও অ্যাপ আপডেট করুন: আপডেটের মাধ্যমে নিরাপত্তা ঘাটতি ঠিক হয়। পুরনো ভার্সনে হ্যাকাররা সহজে ঢুকতে পারে।
৬️। অচেনা অ্যাপ বা ফাইল ডাউনলোড করবেন না: শুধু বিশ্বস্ত উৎস (যেমন Google Play Store, Apple App Store) থেকে অ্যাপ ইনস্টল করুন।
৭️। ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন না: নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা OTP কারো সাথে শেয়ার করবেন না— এমনকি “customer care” বললেও না।
৮️। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রাইভেসি সেটিংস ঠিক রাখুন: ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদিতে কে আপনার পোস্ট বা তথ্য দেখতে পারবে, তা নিজে ঠিক করে নিন।
৯️। নিয়মিত ব্যাকআপ রাখুন: গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ক্লাউডে বা এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভে সংরক্ষণ করুন, যাতে হ্যাক হলে ডেটা না হারায়।
১০। অ্যান্টিভাইরাস ও ফায়ারওয়াল ব্যবহার করুন: ভালো মানের অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন এবং নিয়মিত স্ক্যান দিন।
১১। ই–মেইল অ্যাকাউন্ট এর নিরাপত্তা: ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক বা টুইটারে অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ই–মেইল ঠিকানা প্রায় বাধ্যতামূলক। তাই ই–মেইল নিয়মিত ব্যবহার না করলেও ই–মেইল অ্যাকাউন্ট সবারই হয়েছে বলা যেতে পারে। ই–মেইল অন্য অ্যাকাউন্টগুলোর সঙ্গে যুক্ত থাকে বলেই এর নিরাপত্তায় বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
১২। ইউটিউব ফর কিডস: ইউটিউবের জন্য বাচ্চাদের "ইউটিউব ফর কিডস" অ্যাপটি ব্যবহার করতে দেয়া, কারণ ইউটিউবেও এমন অনেক ভিডিও আছে যেগুলো দেখলে বাচ্চারা মানসিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। এছাড়া আপনি গুগল প্লে-তে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ব্যবহার করতে পারেন, এতে করে আপনার সন্তান কি করছে, কি অ্যাপ ইন্সটল করছে এছাড়াও মুভি, টিভি শো, বই, গান এসব মনিটর করতে পারবেন। এবং যেকোনো বিপদে সহায়তা করতে পারবেন।
এসব সতর্কতা মেনে চলার পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে সময়োপযোগী ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রযুক্তি ব্যবহারের সকল ঝুঁকি এবং এগুলো প্রতিকারের উপায় জেনে নিয়ে তারপর অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করতে হবে। মনে রাখবেন “সতর্কতা, সচেতনতা, আর সঠিক প্রযুক্তি ব্যবহারের অভ্যাসই অনলাইনে নিরাপদ থাকার মূল চাবিকাঠি।”
মন্তব্য করুন