
বিজ্ঞানীরা মানব ত্বকের কোষের জিনগত উপাদান ব্যবহার করে তৈরি ডিম্বাণুতে সফলভাবে নিষেক ঘটানোর উপায় উদ্ভাবন করেছেন। গবেষকদের মতে, এ প্রযুক্তি ভবিষ্যতে এমন সব মানুষকে আশা দিতে পারে যারা সন্তান ধারণে সমস্যায় ভুগছেন।
এ প্রক্রিয়াটির নাম ইন ভিট্রো গ্যামিটোজেনেসিস (IVG), যেখানে ত্বকের কোষকে পুনঃপ্রোগ্রামিং করে এক ধরনের স্টেম সেলে রূপান্তরিত করা হয়। গবেষকদের মতে, এ প্রযুক্তির রয়েছে অসাধারণ চিকিৎসাগত সম্ভাবনা, বিশেষ করে যেসব মানুষের কার্যকর শুক্রাণু বা ডিম্বাণু নেই তাদের জন্য।
এই প্রক্রিয়াটিতে ত্বকের কোষের নিউক্লিয়াস (যেখানে জিনগত উপাদান সংরক্ষিত থাকে) নেওয়া হয় এবং তা নিউক্লিয়াসবিহীন ডিম্বাণুর ভেতরে প্রতিস্থাপন করা হয়। একে বলা হয় সোমাটিক সেল নিউক্লিয়ার ট্রান্সফার। তবে এভাবে তৈরি কোষে নিষিক্ত ডিম্বাণুতে অতিরিক্ত ক্রোমোজোম থেকে যায়। ইঁদুরের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সেট অপসারণের পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা হলেও মানব কোষে তা আগে চেষ্টা করা হয়নি।
এই গবেষণায় মার্কিন বিজ্ঞানীরা ‘মাইটো-মিওসিস’ নামক এক প্রক্রিয়া চালু করেছেন, যা প্রাকৃতিক কোষ বিভাজনের অনুকরণ করে একটি অতিরিক্ত ক্রোমোজোম সেট বাদ দেয়। এর ফলে তৈরি হয় একটি সুস্থ কোষ, যা নিষিক্ত হতে সক্ষম।
এই প্রক্রিয়ায় ল্যাবরেটরিতে ৮২টি বিকাশমান ডিম্বাণু (ওসাইট) শুক্রাণুর সঙ্গে নিষিক্ত করা হয়। এর মধ্যে প্রায় এক-দশমাংশ ছয় দিন পর সেই পর্যায়ে পৌঁছে, যেখানে দ্রুত কোষ বিভাজন ঘটে যা ব্লাস্টোসিস্ট স্তর নামে পরিচিত। সাধারণত এ পর্যায়েই আইভিএফ চিকিৎসায় ভ্রূণকে জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয়।
সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজনন চিকিৎসা বিভাগের অধ্যাপক ও কনসালট্যান্ট ইয়িং চেং বলেন, ‘প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানীরা দেখাতে সক্ষম হয়েছেন যে সাধারণ দেহকোষের ডিএনএ একটি ডিম্বাণুর ভেতরে প্রতিস্থাপন করে তা সক্রিয় করা যায় এবং ডিম্বাণুটি তার ক্রোমোজোম সংখ্যা অর্ধেক করে নিতে পারে। এটি সেই বিশেষ প্রক্রিয়ারই প্রতিলিপি, যার মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু তৈরি হয়।‘
অধ্যাপক চেং আরও মনে করেন, এ প্রযুক্তি একদিন বন্ধ্যাত্ব ও গর্ভপাত সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে পাল্টে দিতে পারে এবং ‘যাদের অন্য কোনো বিকল্প নেই তাদের জন্য ডিম্বাণু বা শুক্রাণু সদৃশ কোষ তৈরির পথ খুলে দিতে পারে।‘
এডিনবরার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল রিপ্রোডাকটিভ সায়েন্সের অধ্যাপক রিচার্ড অ্যান্ডারসন বলেন, ‘ত্বকের কোষ থেকে নেওয়া জিনগত উপাদান ব্যবহার করে এমন এক ডিম্বাণু সদৃশ কোষ তৈরি করা সম্ভব, যার সঠিক সংখ্যক ক্রোমোজোম রয়েছে এবং যা নিষিক্ত হয়ে প্রাথমিক ভ্রূণে বিকশিত হতে পারে।‘
মন্তব্য করুন