
জামাকাপড় ধুয়ে পরিষ্কার করার ওয়াশিং মেশিন তো আজ ঘরে ঘরে। এবার জাপান এমন যন্ত্র উন্মোচন করেছে, যা মানুষকে ধুয়ে ও শুকিয়ে দেবে মাত্র ১৫ মিনিটে!
অলীক কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিয়ে জাপান আবার দেখিয়ে দিল ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির বিস্ময়। ‘মিরাই নিনগেন সেনতাকুক’ নামে পরিচিত এই মেশিনটি ক্যাপসুল আকৃতির। ভেতরে ঢুকে বসলে এটি শরীরজুড়ে পানির স্প্রে ছিটিয়ে গোসলের মতো পূর্ণাঙ্গ অভিজ্ঞতা দেয়।
মেশিনটি তৈরি করেছে সায়েন্স কো. লিমিটেড। ২০২৫ সালের এপ্রিলে শুরু ওসাকা কানসাই এক্সপোতে এটি প্রথম প্রদর্শিত হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রযুক্তি ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় এক নতুন যুগের সূচনা করতে পারে। কারণ এটি একসাথে গতি, আরাম ও দক্ষতা নিশ্চিত করছে।
জাপানি সংবাদপত্র আসাহি শিম্বুনের এক প্রতিবেদন অনুসারে, 'হিউম্যান ওয়াশিং মেশিন'-এ প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ জন ব্যক্তি ১৫ মিনিটের মধ্যে শরীর ধোয়া ও শুকনোর চক্রটি উপভোগ করতে পারবেন। কোম্পানির ওয়েবসাইটে একটি বিশেষ পাতায় মেশিনগুলোর রিজার্ভেশনও গ্রহণ করা হচ্ছে।
নতুন নকশাটি দেখতে জেট ফাইটার ককপিটের মতো। এর পেছনের দিকে একটি স্বচ্ছ কভার খোলা থাকে। ব্যবহারকারীরা একটি আসনে বসার পর ডিভাইসটি আংশিকভাবে গরম পানিতে ভরে যায়। সেগুলি সাবান ও নানা রকম বডি ওয়াশ দিয়ে তৈরি হবে, যা ত্বক থেকে মৃত কোষ দূর করবে।
নিরাপদ এবং আরামদায়ক তাপমাত্রা নিশ্চিত করার জন্য সেন্সরও আছে, যেগুলো দেহের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলো পরিমাপ করে। এআই সিস্টেম ব্যবহার করে মানসিক অবস্থা বিশ্লেষণ করার ব্যবস্থাও রয়েছে। যে ভেতরে গোসল করছে, তার ত্বকের ধরন কেমন, তা বুঝেই সাবান বা বডি ওয়াশ নির্বাচিত হবে। ভিতরে বন্ধ অবস্থায় গোসল করতে ভয় পাচ্ছে কি-না অথবা কোনও রকম উদ্বেগে ভুগছেন কি না, তা বুঝে পানির গতি নির্ধারণ করা হবে। যন্ত্রের ভিতরে আরামদায়ক পরিবেশ তৈরির নানা ব্যবস্থাও করবে সেই যন্ত্র।
এই ধারণাটি প্রথম শুরু করে 'স্যানিও ইলেকট্রিক' কোম্পানি (বর্তমানে প্যানাসনিক হোল্ডিংস কর্পোরেশন নামে পরিচিত)। ১৯৭০ সালে জাপান ওয়ার্ল্ড এক্সপোজিশনে এই ধারণা নিয়ে প্রথম কাজ হয়। বর্তমানে 'সায়েন্স কোং' কোম্পানিটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর করা হয়েছে।
কোম্পানির চেয়ারম্যান ইয়াসুয়াকি আওয়ামার কাছে এই প্রকল্পটি অত্যন্ত 'ব্যক্তিগত'। ওসাকাতে ছোটবেলায় তিনি ১৯৭০ সালের এক্সপোতে মূল প্রদর্শনীটি দেখার জন্য লাইনে অপেক্ষা করেছিলেন। আর এখন নিজেই এটি বাস্তবায়ন করেছেন। আওয়ামা বলেন, 'এই নতুন হিউম্যান ওয়াশিং মেশিনটি ১৯৭০ সালের এক্সপোর একটি উত্তরাধিকার।'
জাপানের উদ্ভাবকরা মনে করছেন, ভবিষ্যতের জীবনযাত্রায় এ ধরনের হাই-টেক ডিভাইস মানুষের সময় ও শ্রম সাশ্রয় করবে এবং গোসলের অভিজ্ঞতাকে আরও আধুনিক করবে।
মন্তব্য করুন