শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫

মুভি দেখার সময় সবাই পপকর্ন কেন খায় ?

বৈশাখী ডেস্ক
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৫৩ পিএম

সিনেমা হলে ঢুকলেই নাকে আসে গরম মাখন-মেশানো পপকর্নের গন্ধ। অন্ধকার হলঘরে বড় পর্দার সামনে বসে পপকর্ন চিবিয়ে সিনেমা দেখা—এ যেন সিনেমা সংস্কৃতির এক চিরচেনা দৃশ্য। কিন্তু কেন মুভির সঙ্গে পপকর্ন এমন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে?

এর শুরুটা প্রায় এক শতাব্দী আগের। ১৯৩০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে চলছিল ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা—‘গ্রেট ডিপ্রেশন’। তখন মানুষ সস্তায় বিনোদনের খোঁজে ছিল, আর সিনেমা ছিল সবচেয়ে সহজ বিকল্প। অন্যদিকে পপকর্ন ছিল খুবই সস্তা ও সহজলভ্য। দর্শকেরা নিজে পপকর্ন বানিয়ে হলে নিয়ে যেতেন। কিছুদিন পর হলমালিকরা বুঝলেন, এটি বিক্রি করে বাড়তি আয় করা যায়। সেখান থেকেই সিনেমা হলে পপকর্ন বিক্রি শুরু এবং ধীরে ধীরে তা রীতিতে পরিণত হয়।

পপকর্নের গন্ধ ও স্বাদও এর জনপ্রিয়তার বড় কারণ। গরম পপকর্নের মাখনের ঘ্রাণ হলে ছড়িয়ে পড়লে আনন্দদায়ক এক পরিবেশ তৈরি হয়। এছাড়া এটি হালকা, হাতে খাওয়ার সহজ খাবার—সিনেমার সময় চোখ না সরিয়েও খাওয়া যায় সহজে। চিবোনোর শব্দ, লবণ-মাখনের স্বাদ আর সিনেমার উত্তেজনা মিলিয়ে এক অনন্য আনন্দ সৃষ্টি করে।

জানা যায়, ঊনবিংশ শতকের শুরুর দিকেই আমেরিকাজুড়ে পপকর্ন বেশ জনপ্রিয় হতে শুরু করে। তবে তখন কিন্তু সবাই একে আজকের নামে চিনত না। সেই সময় মজার এই খাবারটি পার্ল মানে ‘মুক্তা’ অথবা ‘ননপ্যারিল’ নামে বিক্রি হতো। অর্থাৎ পপকর্নের তখন দুটি সুন্দর নাম ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে মানুষের মুখে মুখে এর পপকর্ন শব্দটি ব্যবহার হতে থাকে। অবশেষে ১৮৪৮ সালের মধ্যে ‘পপকর্ন’ শব্দটি আনুষ্ঠানিকভাবে ডিকশনারি অব আমেরিকানিজমে জায়গা করে নেয়। সেই থেকেই এই মজার খাবারটি পপকর্ন নামটি পেয়ে যায়।

আর পপকর্নের জনপ্রিয়তার পেছনে একজন মানুষের হাত ছিল, যার নাম চার্লস ক্রিয়েটরস। তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের এক মিষ্টির দোকানের মালিক। চার্লস ক্রিয়েটরস তাঁর দোকানে চিনাবাদাম ভাজার জন্য একটি বাষ্পচালিত মেশিন তৈরি করেছিলেন। পরে নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে তিনি সেই মেশিনটিকে পাল্টে এমন এক মেশিন তৈরি করলেন, যা খুব দ্রুত দারুণ পপকর্ন তৈরি করতো ।তখন খেলাধুলার মাঠ কিংবা সিনেমা হলের মতো যেখানেই প্রচুর ভিড় জমত, সেখানেই চার্লস ক্রিয়েটরসের পপকর্ন মেশিন দেখা যেতে শুরু করল। পপকর্নের জনপ্রিয়তার পেছনে শুধু সুস্বাদু স্বাদই ছিল, এমনটা নয় বরং তখন এটি তৈরি হতে দেখাটাও ছিল বেশ মজার ।

অর্থনৈতিক দিক থেকেও এটি অত্যন্ত লাভজনক। সিনেমা হলগুলোর বড় একটি আয়ের উৎস এখন পপকর্ন বিক্রি। এক ব্যাগ পপকর্ন তৈরিতে খরচ সামান্য হলেও বিক্রিমূল্য কয়েকগুণ বেশি—ফলে ব্যবসার জন্য এটি আদর্শ। হলমালিকেরা সিনেমার টিকিট বিক্রি করে যে লাভ হয়, তার চেয়েও বেশি মুনাফা আসছে পপকর্ন বিক্রি করে। বিষয়টি বুঝতে পেরে বিশ্বের সব সিনেমা হল ধীরে ধীরে এই পপকর্ন বিক্রি শুরু করে। তখন থেকে আজ পর্যন্ত জনপ্রিয়তা একটুও কমতে দেয়নি পপকর্ন।

আজ সিনেমা ও পপকর্ন একে অপরের পরিপূরক। সিনেমা হল হোক বা বাড়ির টেলিভিশন, হাতে এক বাটি পপকর্ন থাকলেই মনে হয় যেন বিনোদন পূর্ণতা পেল!

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
জামায়াতের ব্যারিস্টার আরমান নাকি বিএনপির তুলি, শেষ হাসি কার?  
জামায়াতের ব্যারিস্টার আরমান নাকি বিএনপির তুলি, শেষ হাসি কার?  
নেদারল্যান্ডসকে কেন সাইকেলের দেশ বলা হয় ?
নেদারল্যান্ডসকে কেন সাইকেলের দেশ বলা হয় ?
বন্ধুকে টাকা ফেরত দেওয়ার দিন আজ
বন্ধুকে টাকা ফেরত দেওয়ার দিন আজ
প্রতিবাদ জানাতে ডিম ছোড়া হয় কেন?
প্রতিবাদ জানাতে ডিম ছোড়া হয় কেন?